আসসালামু আলাইকুম। ময় ডিয়ার ভিউার্স কেমন আছেন আপনারা সবাই। আশা করছি সবাই অনেক অনেক অনেক ভালো আছেন।চৌঠা নীতি আজকে একটি সুন্দর গল্প।
আজকের যে গল্পটি সেটি মা ও ছেলের গল্প আমার মাও ছেলের গল্পের সিরিজের একটি অন্যতম একটি গল্প। মায়ের সাথে সন্তানের ভালোবাসাটা একটি অদ্ভুত একটি সম্পর্ক।
সময়ের সাথে সাথে সে সম্পর্ক পরিণতি তো ভিন্ন হয়। ছোট থেকে বড় হওয়া একটি সন্তান।কখনও কখনও।সন্তানকে মায়ের পুতুল খেলার সাথে মনে হতে পারে আবার কখনও বন্ধু।
খুব কাছের মানুষ আবার কখনো।গার্ডিয়ান তো সময়ের সাথে সন্তান। এর সাথে মা বাবার যে সম্পর্ক।তা এক চিরন্তন সত্য ও বাস্তব এমনই একটি বাস্তব ঘটনার অবলম্বনে আজকের গল্প।
হলে শুরু করা যায় আজকের সুন্দর গল্পটি। আশা করছি এই গল্পটিও বরাবরের মতো আপনাদের মন ছুঁয়ে যাবে। আর যদি আপনি আমার জন্য নতুন হয়ে থাকেন নিশ্চয়ই গল্প ভালো লাগলে আমার চ্যানেল টি সাবস্ক্রাইব করবেন। লাইক করতে ভুলবেন না কিন্তু।আজকের গল্প।আমি তিন ছেলের মা।সন্তানের না বলে ছেলের বললাম কেন?
ছেলের মা হতে গেলে নাকি ভাগ্য লাগে?
আমার প্রথম সন্তান পিয়াস হওয়ার পর ওর দাদী মানে আমার শাশুড়ি মা এমনটাই বলেছিলেন। বড় জায়ের দুই মেয়ে মেজো জায়ের সন্তান নেই। বিয়ের এক বছরের মাথায় আমি পুত্র সন্তানের মা হলাম।বাড়িতে হুলুস্থুল পড়ে গেল।আমার শাশুড়ি মা তার পুত্রকে পেয়ে যেন জীবনের সব চাইতে মূল্যবান সম্পদ পেলেন।
মা হবার আনন্দের চাইতেও ওনার আনন্দ দেখে আমার চোখে জল এল।উনি আমার কান্না দেখে অবাক হয়ে বললেন। ও বৌমা কাণ্ড কেন তুমি খুশি হও নাই। আমি স্মিত হিসি মাথা নাড়লাম।বললাম।আপনি কাঁদছেন যে।লজ্জা পেয়ে উনি চোখ মুছে বললেন আনন্দে কান্দি গোবো ভাবছিলাম বংশ রক্ষা মনে হয় হইব না।
কপালটা বোধ হয় আমার এমনই। কিন্তু তুমি। আমার অন্যদের মতো নিরাশ করো নাই।এ কথা শুনে আমার বড়ো যা মুখ মলিন করে ছোট মেয়েকে কোলে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল বিনা অপরাধে প্যাচারি কষ্ট পায় তার কি দোষ কন্যাসন্তান তো আর সে নিজে চেয়ে আনে নাই আর আনলেই বাকি।
কি ফুটফুটে পরির মতো মেয়ে তার সারাক্ষণ বাড়িটা মাথায় করে রাখে।মেজো যা সপ্তাহখানেক হল বাবার বাড়ি চলে গিয়েছে। কি জানি তাকে আবার কি শুনতে হয়?
আমার মেজভাষুর ভীষণ ভাল মানুষ নিঃসন্তান হওয়ায় নানান মানুষের নানান কথাকে উপেক্ষা করেও ভাবিকে পরম ভালোবাসায় আগলে রেখেছেন এখনও।পিয়াস আমার বড় ছেলে। হবার পর ওর দাদাভাই গরু জবাই দিল বাড়ি বাড়ি মিষ্টি পাঠালো যেন উৎসব লেগেছে বাড়িতে।আমার ফুফু শাশুড়ি এসে বললেন।
মিয়া ভাই তোমার আর চিন্তা নাইগো দেখো রাজপুত্র আইসা পড়ছে দেখতো তোমার মতো হইসে হাইট টা গেলে বেবাক লোকে ফিরা তাকাইবো।আমার দিকে তাকিয়ে বলল, বৌমা বয়সকালে তোমারে দেখার মানুষ চুল্লাইছে।আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করো মা যদিও পিয়াসের বাবার আমি একটি সুস্থ সন্তান পেয়েই খুশি ছিলাম।
তবু সবার কথায় কখনও কখনও আমার মনের ভেতরও সুর বাঁচত। আমি পুত্র সন্তানের মা।পেঁয়াজ হবার দুবছর পর পলক এলো। আর তিন বছরের মাথায় পাপন পিয়াসের দুষ্টুমি ছিল চরমে। দাদুর বাড়ির সবার আদরে আদরে যেন বাঁদর হয়ে উঠেছিল ছেলেটা।কিছুই যেন।বলা যেত না ছেলেকে চোর করে খাওয়াতে পারতাম না।
কান্না করলেই শাশুড়ি মা কোলে নিয়ে চলে যেতেন। দুষ্টুমি করলে বকা দিয়েছি তো আমার শ্বশুরমশাই সহ বাকিরা যেন আমাকে আসামির কাঠ করায় দাঁড় করাত।প্রয়োজন ছাড়া ছেলেটাকে কাছেও পেতাম না।বাড়ি ভর্তি মানুষ সারাক্ষণ কারো না কারো কোলে সে আছে তাতে অবশ্য আমি একটু ফুসরত পেতাম জিরাপার।
পলক হবার বছর খানিক ভেতর ওর বাবা বদলে হয়ে গেল যশোর। তিনি আমাদেরকে ছেড়ে এত দূরে একা যেতে চাইলেন না। ছেলের কথা ভেবে আমার শ্বশুর শাশুড়ি সম্মতি দিলেন।আমাদের কে যেতে হল।
সেদিন পিয়াস পলক নিয়ে উভারি থেকে চলে আসাটা সহজ ছিল না। বাড়িতে যেন শোকে।বয়ে গেল।কথা দিতে হল প্রতি মাসেই যাব। প্রথম প্রথম তিন মাসে একবার।এর পর ছ মাসে।
সময় সেটা বছরে একবার হয়ে গেল।পাপন যখন পেটে তখন বড় দুটুকু সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেতাম। কোনও কথাই শুনত না। তারা আমার এটা ফেলছে তো ওটা ভাঙছে এখন খাবে না ওটা খাবে না স্কুলে যাবে না। আমার তখন পাগলের মতো অবস্থা।হাই স্কুলে ওঠার পর এ সব কমলেও ঠিকমতো পড়াশোনা করছে কিনা কাদের সাথে মিশছে ওদেরকে ঠিকঠাক মানুষ করতে পারছি কিনা এমন নানান চিন্তায় আমার ঘুম হত না।শুধু ভাবতাম ওরা কবে বড় হবে।
আমিও একটু অফশোর পাব। নিশ্চিন্তে ঘুম দিব পছন্দের গান শুনব বই পড়ব লেখালেখি করব।ওর বাবার আমি দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে বেড়াব।আস্তে আস্তে ওরা বেড়ে উঠতে লাগল।সেই সাথে আমার নিঃসঙ্গতা বাড়তে থাকল।ওরা যে জার্ভার্সিটি চাকরি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল চাইলেও ওদেরকে ধরে রাখতে পারি না।
ওদেরকে যে বড় হতে হবে।আর আমি সারাদিন বাড়িতে একা।ছোটা বুয়া সব গুছিয়ে দিয়ে যায়। আমি শুধু রান্নাটা করি প্রেসার ডায়াবেটিস সব বাঁধিয়ে ফেললাম। এদিকে সারারাত ঠিকমতো ঘুম হয়না। কোন চিন্তা নাই তারা নাই তবু শুলেই। আর আমার আগের মতো ঘুম পায় না।প্রিয় বই খুলে বসলেও।পড়ার ধৈর্য থাকে না।
এদিকে চোখু।আর ভাল সাপোর্ট দেয় না।পিয়াসের বিয়ে দিলাম বউ আসল বাড়িতে বেশ কাটছিল দিনগুলো। পিয়াস আর মুখ এর হানিমুনে ওরা আমাদেরকে নিয়ে যাবে বলে বায়না ধরল তা কি হয়?
ছেলে মেয়েগুলো এত বোকা না। তাছাড়া আমার হাঁটুতে ব্যথা। ওর বাবার হাঁপানি শীতের ভেতর বের হয়ে আরেকটা ঝামেলা বাড়াবোদের পাঠিয়ে দিলাম। পিয়াস কে সাথে বউকে।মৌ খুব মিষ্টি মেয়ে। কিন্তু একটু গম্ভীর একমাত্র সন্তান হওয়ায়।একা থাকতে থাকতে মেয়েটা বোধহয় কম কথা বলে অভ্যস্ত।ছ মাসের মাথায় পিয়াস স্কলারশিপ পেয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে গেল। বউকে সাথে নিয়ে মাঝে মাঝে ফোনে কথা হয় মাত্র। পলকের পোস্টিং ছিল চিটাগাং সংসার পাতল সেখানে।
মাঝে মাঝে।ফোন দিতাম কথা হতো।ছুটিতে বাড়ি আসত এই যা।পাপন টাকে রাখলাম আমার কাছে ওকে কোথাও যেতে দিব না।বেশ দেখে শুনে বললাম, ভাবলাম এবার আমার দায়িত্ব শেষ। সংসারের দায়িত্ব দিলাম। ওকে বেশ চলছিল সব।তবু কোথায় যেন অপূর্ণতা।ছোট বউটা প্রায়ই বাড়ি যাওয়ার জন্য বায়না করতে থাকে।
একবার গেলে সহজে ফিরত না বলত মায়ের জন্য খারাপ লাগে বেশিদিন। না গেলেই দেখতাম, মুখটা মলিন করে ঘুরে বেড়াচ্ছে কি আর করবে ব্যাচারি বুড়ি শাশুড়ির সাথে কি বা গল্প করবে?
পাপন তো সারাদিন থাকে হাসপাতালে রাতে বাসায় আছে খায় দায় ঘুমায় নাইট থাকলে তো কথাই নেই।এত ব্যস্ততা ছেলেটার দেখলে আমার মায়াই লাগে ছোট।বৌ মানে?
নিশি প্রেগন্যান্ট হবার পর থেকে বাবার বাড়িতেই যেন স্থায়ী হয়ে গেল। পাপনের হাসপাতাল বাড়ি থেকে বেশ দূরে হওয়ায় সেও আলাদা বাসা নিয়ে চলে গেল। ছেলেটা সময় পায় একটু তাও যদি জার্নিতে চলে যায় তবে বউ বাচ্চাকে সময় দেবে কখন?
ছেলেরা চাইত আমরা ওদের সাথে গিয়ে থাকি। একটু একটু গড়ে তোলা আমার 30 বছরের সংসার চাইলেই কি আমি ছেড়ে যেতে পারি?
না আমিও পারিনি।ঠিক যেমন পারেননি আমার শাশুড়ি মা।
আমরাও চেয়েছিলাম। তিনি আমাদের কাছে থাকুক। কেন তিনি সেদিন রাজি হননি সেটা এখন বুঝতে পারি।আমার শ্বশুর মারা যাবার পর তিনি ও এমন একাকিত্বকে বরণ করে একসময় চলে যান আমাদেরকে ছেড়ে। তাঁর অতি স্নেহের পুত্র পিয়াস তাকে গল্পটি সারেস্ট হবে।