আমার ভাবী ছিল একজন সুন্দরী যুবতী। তাঁর বিয়ের পর ভাইয়া বিদেশে চলে গিয়েছিলেন এবং পরে ভাবীর শরীরে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। প্রায় রাতে তিনি আমাকে তার ঘরে ডেকে নিয়ে বলতেন, আমার মাথাটা বেশ ভারী লাগছে। তেল দিয়ে একটু মালিশ করে দিবে। আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করতাম যেন তার আরাম হয়। একদিন ভাবি বললেন, তুমি কি একটু লাইটটা নিভি যে ড্রেসিং টেবিল থেকে তেলের বোতলটা নিয়ে আসতে পারবে। আমি তেলের বোতলটা নিয়ে ফিরে এলাম। তারপর ধীরে ধীরে তার মাথায় তেল লাগাতে শুরু করলাম। তিনি শান্তভাবে শ্বাস নিলেন আর আমাকে উৎসাহ দিয়ে বললেন, ঠিক এভাবেই করো। এতে আমার বেশ আরাম লাগবে এবং তাড়াতাড়ি ভাল হবে।
আমি অবাক হয়ে শুনলাম এবং আমার ভাবী বললেন তোমার ভাই বিয়ের কিছুদিন পরই চলে গেছে আর আমি এখন আমার দায়িত্ব নিজেই পালন করছি। আমি এখনও তরুণ। তাই মাঝে মাঝে সাহায্যের প্রয়োজন হয়। যদি তোমার কিছু খারাপ না লাগে আমাকে সহায়তা করো। আমি উত্তরে বললাম যে, তখন আমার বয়স ছিল 22 বছর। যখন আমার ভাইয়ের বিয়ে হয়েছিল তখন আমি বাড়িতে একাই থাকতাম। আমি সবসময় আমার ভাবিকে তানিয়া বলে ডাকতাম। আমি বলতাম ভাই বাইরে থাকাকালীন তাকে প্রায়ই চিন্তিত এবং বিষণ্ণ দেখাত। আমি একদিন তাকে চুপচাপ কাঁদতে দেখেছি কিন্তু জিজ্ঞাসা করিনি। হয়তো সে তার স্বামীকে মিস করছিল। তানিয়া দিনের বেলা ঘরের সব কাজ করত। আর রাতে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে থাকত। আসলে তার স্বামী বিয়ের পরপরই চলে গিয়েছিল যা একজন নববধুর জন্য খুব কঠিন সময় ছিল। এই বিয়ে শুধুমাত্র আমার সুবিধার জন্য ছিল না। বাড়ির দেখা শোনার জন্য একজন মহিলার প্রয়োজন ছিল। তাই ভাই তানিয়াকে এখানে রেখে গিয়েছিল। সেই থেকে তানিয়া একা হয়ে যায়। আর আমি ছিলাম তার একমাত্র সঙ্গী।
তিনি একজন মধ্যবয়সী মহিলা যার পরিবার তার প্রতি যত্ন নিচ্ছিল না। তাই তিনি আলাদা ছিলেন। ঐ দিন ভাবি আমাকে তার ঘরে ডেকে পাঠিয়েছিল। তবে সে রাতে কি নিয়ে কথা বলতে চেয়েছিল তা আমি জানতাম না। আমি ভাবিকে মনে মনে অনেক ভালবাসতাম এই ভেবে আমি দ্রুত তানিয়া ভাবির রুমে পৌঁছালাম। কারণ যাওয়ার সময় ভাই আমাকে বলেছিলেন ভাবীর খেয়াল রেখো আমি না থাকলেও তার প্রয়োজনগুলো পূরণ করো। আমি সবসময় ভাবতাম ভাবি ভাইয়ের দায়িত্ব নিতেন। কিন্তু তিনি কিছু ব্যাপারে অসন্তুষ্ট ছিলেন। পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে আমাদের সবাইকেই কোনও না কোনও ভাবে অবদান রাখতে হতো। রাত বারোটার দিকে ভাবি আমাকে ডেকে পাঠালেন। আমি ভেবেছিলাম কিছু জরুরি কাজ আছে। তাই আমি দ্রুত তার ঘরে গেলাম। কিন্তু সেখানে গিয়ে একটু অস্বস্তি হল। কারণ ভাবি বিছানায় শুয়েছিলেন। দরজায় দাঁড়িয়ে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ভাবি কোনও কাজের সাহায্য লাগবে। কোনও দিন তাকে স্কার্ফ ছাড়া দেখিনি। তাই একটু অবাক হয়েছিলাম। ভাবি আসলেই অনেক সুন্দর ছিলেন। তখনই ভাবি বললেন ভয় পাসনা। এই বাড়িতে তুই হচ্ছিস আমার একমাত্র সঙ্গী। তাই তোকে দেখেছি আমি রুমে ঢুকে কিছুটা লজ্জিত হয়ে পড়লাম।
কারণ আমি বরাবরই একটু লাজুক প্রকৃতির। ভাবি আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, এই দুঃসময়ে তুই আছিস আমার পাশে তাই তো তোকে ডেকেছি। আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না যে তিনি আসলে কি বলতে চাইছিলেন। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আমার মাথায় খুব ব্যথা হচ্ছে। তোর ভাই বলতো, তুই খুব ভালো করে মাথায় মালিশ করতে পারিস। আমি হেসে ফেললাম। কারণ এটা সত্যি যে ভাই এখানে থাকাকালীন প্রায়ই আমাকে তার মাথায় তেল দিয়ে মালিশ করতে বলতেন। কিন্তু ভাবলাম আমি কীভাবে ভাবিকে মাথায় তেল মালিশ করতে পারি?
আমি কিছুটা দ্বিধায় ছিলাম এবং খুব অস্বস্তি বোধ করছিলাম। একজন পুরুষের পক্ষে একজন মহিলাকে এভাবে সাহায্য করা স্বাভাবিক না এবং অন্য কেউ হলে আমি পরিষ্কারভাবে অস্বীকার করতাম। কিন্তু তখন ভাবি আমার দিকে তাকিয়ে তেলের বোতল দেখিয়ে বললেন, এটা ভালো তেল। অন্তত আমার মাথায় একটু তেল মাখিয়ে দেয়। তার চোখে জল তলমল করছিল। মনে হচ্ছিল তার অনেক কষ্ট হচ্ছিল। আমি তেলের বোতলটা তুলে নিয়ে তার পাশে বসলাম। ধীরে ধীরে তার মাথায় তেল ঢেলে মাখাতে শুরু করলাম। যদিও আমার ভেতরটা কিছুটা অস্থির ছিল। আমার হাত সামান্য কাপ ছিল আর আমি আমার চোখ নিচু করে রেখেছিলাম। তখন ঘরের পরিবেশে এক ধরনের নীরব। প্রশান্তি নেমে এল যেটা আগে অনুভব করিনি ভাবি আমার দিকে তাকাল না। আর আমিও লজ্জায় তার দিকে তাকাতে পারছিলাম না। তবে আমি জানতাম ভাবির কথা না শুনলে আমার ভাইয়ের কাছে অপদস্থ হতে পারতাম। তানিয়া ভাবীর কথা আজ কোনও ভাবেই প্রত্যাখ্যান করেনি। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম এবং তিনি কোনও প্রশ্ন না করেই অনুমতি দিলেন। আমি তার মাথায় তেল দিয়ে মালিশ করছিলাম। কিছুক্ষণ পরে ভাবি সম্ভবত ঘুমিয়ে পড়েছিল। আমি চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। এই অনুভূতিটা আমার ভেতরে কিছু পরিবর্তন এনেছিল। ভাবি মুখটা আমার মনে অদ্ভুত ভাবে প্রভাব ফেলেছিল। কিন্তু যখন মনে হল তিনি আমার ভাইয়ের স্ত্রী। আমি দ্রুত নিজেকে সামলে নিলাম। সেদিন মনে করেছিলাম আর তানিয়া ভাবির ঘরে যাব না। পরের দিন সকালে ভাবি সম্পূর্ণ শালীনভাবে পোশাক পরে আমার জন্য নাশতা তৈরি করছিলেন। নাস্তা দিতে গিয়ে তিনি বললেন, কামরান তুমি আমার অনেক উপকার করেছো। আমি কৃতজ্ঞ।
আমার মাথা ব্যথা কমে গেছে। তার কথা শুনে আমি লজ্জিত হলাম এবং বললাম। তুমি সারাদিন এত কাজ করো তোমাকে একটু সাহায্য করতে পেরেই ভালো লাগছে। তিনি হেসে বললেন, যেদিন তোমার ভাই ফিরবে সেই দিন আমার ক্লান্তি দূর হবে। আমি আর কিছু বললাম না। এরপর আমি কলেজে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলাম এবং বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম। আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেও সারাক্ষণ মনে মনে ভাবছিলাম। আজকের ঘটনা কোনও ভাবে আমার বোনকে জানানো উচিত কি না। বিকেলে বাড়ি ফিরে দেখি আমার বোন আর ভাবি গল্পে বেশ ব্যস্ত ছিলেন এবং আমার দিকে তেমন মনোযোগ দেননি। বিশ্রামের পর আমি রুম থেকে বের হয়ে দেখি ভাবি কাপড় ধুচছেন। তিনি খুব কষ্ট করে কাপড়ের বালতি নিয়ে বারান্দার দিকে যাচ্ছিলেন। এ দেখে আমি বিব্রত বোধ করলাম। কারণ কাপড়গুলো সব আমার ছিল। মনে হল আমার জন্যই তাকে এত কষ্ট করতে হচ্ছে। আমি এগিয়ে গিয়ে তার হাত থেকে বালতি নিয়ে ছাদে নিয়ে গেলাম। আমরা একসঙ্গে কাপড়গুলো শুকাতে দিলাম। কিন্তু দেখলাম ভাবি যেন বেশ কষ্ট পাচ্ছেন হাঁটতে সমস্যা হচ্ছিল।
আমি হেসে বললাম। তুমি যদি বিশ্রাম নাও তাহলে ভাল হবে তিনি হেসে উত্তর দিলেন, চিন্তা করিস না। আমি তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবো। তারপর তিনি তার রুমে চলে গেলেন। কয়েকদিন ধরে তানিয়া ভাবির আচরণও আমার বোধগম্য হচ্ছিল না। জেন তিনি কিছু লুকানোর চেষ্টা করছিলেন। বিকেলের শেষে আমি চা খেতে যাওয়ার পথে। হঠাৎ ভাবির রুম থেকে কান্নার আওয়াজ শুনলাম। মনে হল তিনি কাউকে দোষারোপ করছেন। দরজার কাছে থেমে গেলাম এবং বুঝতে পারলাম তিনি কারও উপর বিরক্ত ছিলেন। কিন্তু সেই কথাগুলো শুনে আমি আরও বিভ্রান্ত হয়ে গেলাম। মনে হল তিনি অন্য কিছু নিয়ে চিন্তিত ছিলেন যা আমাকে ভুল পথে পরিচালিত করছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম না কার সাথে এ ব্যাপারটা শেয়ার করব। শেষমেশ আমার ভাইকে ফোন দিলাম।
কথায়, কথায় জিজ্ঞেস করলাম সব ঠিক আছে কিনা। ভাই একটু চুপ করেই ছিল। এরপর ফোনটা কেটে দিল। এরপরও আমার মাথা কাজ করছিল না। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। রাতের দিকে ভাবি আমাকে আবার ফোন করল। বলল তার রুমে যেতে। আমি পৌঁছালাম দেখি সে শুয়ে আছে। বলল, আমার মাথায় একটু তেল মালিশ করে দাও। আমি নিঃশব্দে তেলের বোতলটা তুলে নিলাম এবং মন না চাইলেও মাথায় মালিশ শুরু করলাম। আর আমরা অনেক গল্প করছিলাম। মনে মনে ভাবছিলাম কলেজের পর দিনগুলোতে কেমন অনুপস্থিত ছিলাম। পরের দিন কলেজ থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে এলাম। ঘরে ঢুকে দেখলাম দরজায় তালা। ভাবি তখনও ঘরে নেই। অপেক্ষা করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেল তানিয়া ভাবি অনেকটা ক্লান্ত হয়ে ফিরল শরীরঘামে ভিজে গেছে। দরজা খুলে দিতেই শেমলান হাসি দিল। জিজ্ঞাসা করলাম, সারাদিন কোথায় ছিল?
সে বলল, ঘরের কাজেই ব্যস্ত ছিল। কিন্তু বাইরে যাওয়ার প্রসঙ্গটা টেনে আনল না। রাত হল। আবার ভাবি আমাকে ডাকল। এবার আমার মনে প্রশ্ন তৈরি হচ্ছিল। আমি জানতাম সে হয়তো আবার ম্যাসাজ চাইবে। মনের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল, কিন্তু কথা বলতে রাজি না হয়েও তার রুমে গেলাম রুমে গিয়ে তেলের বোতলটা তুলে নিলাম। এবার অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল। ভাবি চুপচাপ শুয়ে রইল। কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ আমার হাতটা ধরে ফেলল। আমি থমকে গেলাম বুঝতে পারছিলাম না কী ঘটছে। ভেতরে ভেতরে অস্বস্তি জেগে উঠল। কিছু বলার আগেই ভাবির মুখে কঠোর অভিব্যক্তি ফুটে উঠল যেন তার মনের কিছু চাপা কথা ছিল। যা সে বলতেই চাচ্ছিল না। ভাবি বলল, আমি তোমার সাথে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চাই। কিন্তু লাইটের আলোতে তোমার সামনে কথা বলার সাহস পাচ্ছি না। আমি ঘরের লাইট অফ করে দিলাম। অন্ধকারে তার হাতে আমার হাত রাখল। তারপর এমন কিছু শেয়ার করো যা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। তানিয়া ভোবি বলল, আমি সবসময় অন্যদের কাছে প্রিয় হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কখনও কেউ আমার দিকে তাকায়নি। তাই একাকিত্ব ছিল আমার নিত্যসঙ্গী। একদিন তার জীবনে এমন একজন এল যে তার মনে আসার আলো দেখা দিল। সে বলল, আমি ভেবেছিলাম অবশেষে কাউকে পেলাম যে আমার প্রতি স্নেহশীল হবে। আমি তার জন্য অনেক কিছু করেছি। আমার উপার্জিত অর্থ তার চাহিদা পূরণে ব্যয় করেছি। কিন্তু যখন ভাবিতাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিল সে বলল, তুমি এখন বয়স্ক আমি তোমার সাথে আর থাকতে চাই না। আমি এখন সফল হয়েছি। আর তোমার প্রয়োজন নেই। এই কথাগুলো ভাবিকে ভেঙে দিল। শারীরিক পরিশ্রমের কারণে তার শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছিল। কোমরে ব্যথা শুরু হয়েছিল যখন তোমার ভাইয়ের প্রস্তাব এল বিয়ের। আমার মা বাবা আমাকে বিয়েতে রাজি করিয়ে নিলেন।
আমি তখন থেকে সব সময় নিজেকে নিয়ে আফসোস করি কেন এমন একজনের জন্য নিজের জীবন নষ্ট করলাম যে কখনওই আমার ছিল না। সে আরও বলল, আমার নিজের ভাইবোনেরা আমাকে সেভাবে কখনও মূল্য দেয়নি। আর তোমার ভাইও আমাকে বিয়ে করেছে। মূলত তোমার খুশির জন্য। এখন তোমার ভাই বিদেশে বিয়ে করে নিয়েছে। ওখানেই এখন সংসার করতেছে। সে আর আমার কাছে আসবে না। তোমাদের এসব কথা বলেনি এই কথাগুলো আমাকে স্তব্ধ করে দিল। ভাবি আরও বলল, আমার জীবনের সবকিছু দেওয়ার পরও আমি কিছুই পাইনি। এই ভাবনাগুলো মাথায় ঘুরতে ঘুরতে একদিন বারান্দায় পড়ে যায়। তারপর থেকেই আমার কোমর আর মাথার ব্যথা বাড়তে লাগল। শেষে সে বলল, আমি আমার বাবার বাড়িতে যেতে চাইতাম। কিন্তু আমার মা আমাকে বললেন, কখনও তোমার স্বামীর সংসার ছেড়ে যেও না। আমি সারা জীবন শুধু অন্যদের সেবা করেই কাটালাম। কিন্তু কিছুই পেলাম না। ভাবি ধীরে ধীরে বলল। একদিন বারান্দায় হঠাৎ পড়ে যাওয়ার পর থেকেই তার কোমর আর মাথার ব্যথা বাড়ছিল।
সে আমাকে বলল, মালিশ করত আমি তেলের বোতল তুলে মালিশ শুরু করলাম। তখন সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, আর কতদিন এভাবে বাঁচব জানি না। কিন্তু মা বলেছিলেন, স্বামীর ঘর ছেড়ে যেও না মনে হয় এখানেও কিছু বাকি নেই। আমার জন্য ভাবির কথায় আমার মনটা ভারী হয়ে গেল। সে যেন বুঝে নিয়েছে। তাঁর জীবনে আর কিছু নেই। তার চোখে জল এল বলল আমি তোমার থেকে শুধু একটু আশ্রয় চাই। খুব শীঘ্রই তুমি জানতে পারবে তোমার ভাই ফিরে আসবে না। সে তার নিজের জীবনে এগিয়ে গেছে। আমি কেবল তোমাকে আমার সত্যিটা বলতে চেয়েছিলাম এই কথাগুলো বলার পর ভাবি চুপ হয়ে কাঁদতে লাগল। আমি জানি। আমার ভাই তার প্রতি ভাল আচরণ করেনি এবং এখন সেও তাকে ছেলে চলে গেছে। কিন্তু এতে আমার ভাইয়ের পুরো দোষ ছিল না।
কারণ তারও সময় চলে যাচ্ছিল অনেকক্ষণ পর ভাবি ফিসফিস করে বলল, আমি সারাজীবন এই বাড়িতেই কাটাতে চাই। তোমার জন্য সবকিছু করেছি সেবা করেছি যত্ন নিয়েছি। আমাকে এই বাড়ি ছেড়ে যেতে বলো না। প্লিজ একবার ফিরে এসো। আমি তার কথা শুনে হতবাক হয়ে গেলাম। সে জানত তার জন্য আমার ভাই আর ফিরে আসবে না। তবু সে বলল, আমি এখানে থাকব। তোমার জন্য আমি সবকিছু করেছি। আমাকে যেতে বলো না। আমি তোমাকে কখনও ছেড়ে যাব না। আমি তার দিকে তাকিয়ে শান্তভাবে বললাম, তুমি এখানেই থাকবে। এই ঘর এখন থেকে তোমার নিজের ঘরের লাইটটা অন করালাম এবং তার দিকে ফিরে বললাম তুমি অবশ্যই সুখী হওয়ার অধিকার রাখো। তোমার জীবনও নতুন ভাবে শুরু হওয়ার সময় এসেছে।
আমার পড়াশোনা প্রায় শেষ। তারপর আমরা একসাথে নতুন কোনও পথে হাঁটবো। তিনি নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, সে আর ফিরে আসবে না। আমাকে এখানে থেকে সব সামলাতে হবে। চোখে উদ্বেগের ছাপ ফুটে উঠল আমার মাঝে। মাঝে মনে হয় একদিন তুমিও হয়তো আমায় এই বাড়ি থেকে বের করে দেবে। আমি তার কাঁধে হাত রেখে আশ্বস্ত করলাম, কখনোই না।আমি কখনও তোমাকে এই বাড়ি ছেড়ে যেতে বলব না।আমি যেভাবে এতদিন ধরে এই পরিবারকে আগলে রেখেছ তা আর কেউ করতে পারবে না। তবু ভাবি বলল, তোমার মতো একজনের পাশে থেকেও কেন আমি এত একা আমি সরাসরি তার দিকে তাকিয়ে বললাম, আমি চাই তুমি তোমার নিজের পথ বেছে নাও।তুমি যদি সত্যিই সুখী হতে চাও তাহলে নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজেই নাও।আমি আলো জ্বালালাম ঘরে আলো ছড়িয়ে পড়ল তোমারও সুখের অধিকার আছে ভাবি আমি বললাম।আমার পড়াশোনা শেষের দিকে আমি খুব তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করব।ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি নিজের জীবনকে সম্মান দাও। তারপর আমরা একসাথে নতুন কিছু শুরু করব। তানিয়া চুপ হয়ে শুনল একটু হাসল আর বলল। তোমার সাথে আমার ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠবে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই তার চোখে চিন্তার ছায়া ফুটে উঠল। আমি তোমার চেয়ে অনেক বড় আর আমার জীবনে অনেক ভুল ছিল সে স্বীকার করল আমি বললাম তোমার অতীত নিয়ে চিন্তা করো না। তুমি যা ভুল করেছ তা শুধরে নতুন জীবন শুরু করাই এখন গুরুত্বপূর্ণ। ভাবী চোখে জল এসে গেল তুমি ঠিকই বলেছ সে বলল। কিন্তু এত কষ্ট নিয়ে আমি কতদিন আর বাঁচব। আমি তার কথা শুনে চুপ হয়ে গেলাম।
কিছুক্ষণ পর আমরা একসাথে বসে পুরো ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করলাম। ভাবিতার কষ্টের কথা বলতে বলতে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল। ঠিক তখনই আমি বাবাকে পুরো বিষয় টা জানালাম। আর আমরা সবাই একসাথে বসে সমাধান খুঁজতে লাগলাম। কারণ ভাই বিদেশে বিয়ে করে নিয়েছে। ভাবীর কাছে আর ফিরবে না ভাবি ভাইকে ডিভোর্স দিয়েছে এবং এখন ভাবি আমার সাথে খুব খুশি। আমরা বিয়ে করে নিয়েছি। আমাদের সম্পর্ক এখন অনেক সুন্দর। কিন্তু আজকাল অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়। পুরুষের আজ জীবিকার জন্য সৌদি আরবও দুবাই বা অন্যান্য দেশে যান।
তারা সেখানে অর্থ উপার্জন করে সুখী হলেও অনেকেই তাদের পরিবারের কথা ভুলে যান। স্ত্রী সন্তানদের যত্ন নেন না। কেবল অর্থকেই মুখ্য মনে করেন অনেক সময় পরিবার থেকে দূরে থাকার কারণে সম্পর্কের বন্ধন শিথিল হয়ে যায়। কিছু মানুষ তো এমনও করে যে বিদেশে গিয়ে নতুন কাউকে বিয়ে করে। আর তাদের প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের সম্পূর্ণ ভাবে ভুলে যায়। আমি বললাম, যদি তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে বিদেশে থাকতে না পারো তাহলে ফিরে এসে নিজের দেশে কিছু ব্যবসা শুরু করো।তোমার স্ত্রী ও সন্তানের যত্ন নাও।তাদের পাশে থেকো। তাদের ছোট ছোট চাহিদাগুলো পূরণ করো। না হলে হয়তো তুমি বিদেশে অর্থ উপার্জন করে সুখী হবে। কিন্তু তোমার সন্তানরা এখানে একাকী থেকে বঞ্চিত হবে। তাদের জীবন দুঃখময় হয়ে উঠবে। এরকম পরিস্থিতি আমাদের সমাজে বিরল নয়। গল্পটা কেমন লাগল জানাতে ভুলবে না।
******* ধন্যবাদ *******